Select Page

জেন্ডার চেঞ্জ!

জেন্ডার চেঞ্জ!

নিজের নামে একটা ফেসবুক আইডি খুললাম – আবদুর রহমান। সুন্দর দেখে নিজের একটা প্রোফাইল পিকচার দিলাম। ভালো একটা অর্থবহ ব্যানার সেট করলাম। এবাউট সেকশন ঠিকঠাক মতোই পুরণ করলাম।

কিছু অজানা অচেনা মানুষকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই। কিছু বন্ধুদের খোঁজ করে রিকোয়েস্ট পাঠাই। কেউ কেউ এক্সেপ্ট করলো তো অনেকেই কোনো সাড়া দিলো না। এখন হাতে গোনা বিশ জনের বন্ধু বন্ধু আমার।

লেখালেখির অল্পসল্প অভ্যেস আছে। তাই লিখি আর পোস্ট দেই। দুই একজন দেখে। ইচ্ছে হলে একটা লাইক – ঐ পর্যন্তই, কোনো কমেন্ট নেই। মনে হতে থাকলো যে মনে হয় ভালো লিখতে পারিনা।

এভাবে দুই তিন মাস কেটে গেলো। ফেসবুক বন্ধু বেড়ে পঞ্চাশের মতো হলো। কিন্তু আমার লেখায় তেমন কেউ কমেন্ট করেই না। ক্বচিৎ ভুলে মনে হয় দুই একজন গা ছাড়া ভাব নিয়ে কমেন্ট করে। আমি উত্তর দেই – ঐ পর্যন্তই থেমে থাকে।

মাঝে মাঝে ইউটিউব থেকে গানের পোস্ট শেয়ার করি। কেউ দেখেই না। সুন্দর সুন্দর ছবি শেয়ার করি। দেখার কেউ নেই। আমি অন্যদের ফেসবুক ওয়ালে গিয়ে লাইক কমেন্ট করি যাতে তারাও আমার লেখা পড়ে এবং লাইক কমেন্ট দেয় – আশায় গুড়েবালি।

হাঠাত একদিন নজরে আসে যে একটা সুন্দর মেয়ে তানিয়া কবির আমার বিভিন্ন পোস্ট লাইক কমেন্ট করছে। দুইদিন পর আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। আমি খুশি খুশি এক্সেপ্ট করি। আমি ওর ফেসবুক ওয়ালে গিয়ে দেখি সব শেয়ার করা পোস্ট – আর তাতেই হাজার হাজার লাইক কমেন্ট। তার বন্ধুও প্রায় পাঁচ হাজার। আমি ভেবে পাইনা।

যাই হোক, তানিয়া আমার পোস্টে নিয়মিত লাইক কমেন্ট করে। তাই দেখে আমার পোস্টে লাইক কমেন্ট বাড়তে থাকলো। আমার আরো কিছু বন্ধুও বেড়ে শ হয়ে গেলো।

একদিন তানিয়া আমায় ইনবক্সে নক করে। তারপর থেকে প্রায়ই মেসেঞ্জারে চ্যাট হতো। ভালোই লাগতো। এটা সেটা ইনবক্সে শেয়ার করতো। মন্দ লাগতো না।

কয়েকদিন যেতে না যেতেই হঠাত রাত ২ টার দিকে মেসেজ, – “বন্ধু, জরুরী হেল্প লাগবে।”

আমি প্রতি উত্তরে লিখলাম, – “কি হয়েছে? কি হেল্প করতে পারি?”

সে জানায় যে তার মা হঠাত অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। এখন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। তার কাছে কোনো টাকা নেই। আমি যদি হেল্প করি তাহলে উপকার হয়। পাঁচ হাজার টাকা চাইলো। আমি বললাম যে আমার কাছে এখন এতো টাকা হবে না। তখন বললো যে কোনোভাবে একটু ম্যানেজ করে দিতে। কালকেই বিকেলের মধ্যে সে আমাকে টাকাটা ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিলো। আমি বললাম যে তোমার বিকাশ নাম্বার দাও – আমি চেষ্টা করছি। সে আমাকে ফ্লাইং কিসের ইমোজি সহ একটা বিকাশ নাম্বার দিলো।

আমার নাম আবদুর রহমান। নামটা আমার একটু বোকা বোকা – তাই মনে হয় না? জি, না – আমি অতোটা বোকা নই। আমি ঐ নাম্বারে কল ব্যাক দেই। রিং বেজে বেজে শেষ হয়ে যায়। আবার রিং দেই, আবার রিং দেই… কেউ ধরছে না। আমি মেসেঞ্জারে মেসেজ দিলাম। বললাম, ফোন ধরছো না কেনো। উত্তর এলো একটু বিজি আছে। আমার যা বুঝার তা বুঝে গেলাম। তবুও মেসেজের উত্তরে বললাম যে আমার সাথে কথা না বললে আমি টাকা দেবো না। উত্তর এলো, ঘন্টা খানেক পরে যেনো কল দেই। আমি বললাম, ঠিক আছে।

এদিকে প্রায় ভোর হয়ে এসেছে। আমি কল দিলাম। প্রথমবার ধরলো না। দ্বিতীয় বার রিং দিতে ধরলো। কিন্তু কথা বলছে না। এভাবে মিনিট খানেক চলে যায়। আমি রেখে দেই। মেসেঞ্জারে মেসেজ আসে যে তার মাইক্রোফোন নষ্ট। তাই সে কথা বলতে পারে না। আমি ফিরতি মেসেজে উত্তর দিলাম যে, তোমার নাম্বারটা আমি পুলিশে দিয়ে দিয়েছে ট্রাক করার জন্য। তোমাকে খুঁজে বের করে আমরা হেল্প করবো, – কেমন?

সাথে সাথেই মেসেঞ্জার অফলাইন হয়ে গেলো। আমি মোবাইলে কল দিলাম – দেখি বন্ধ। আর ওদিকে মেসেজ গুলো Unsend করে দিতে লাগলো।

এর কিছুদিন পর আমার নিজের মনে একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায়। আমি আমার ফেসবুক থেকে সমস্ত ছবি ডিলিট করে দেই। তারপর আমি আমার আবদুর রহমান নাম বদলে সিনথিয়া রহমান করে দেই। নেট থেকে অচেনা কোনো এক সুন্দরীর ছবি দিয়ে আমি আমার প্রোফাইল পিক বদলে দেই। স্টাইলিশ একটা ব্যানারও দেই।

এবার আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসা শুরু হয়ে গেলো। আমিও যাকে রিকোয়েস্ট দেই সেও সাথে সাথেই এক্সেপ্ট করা শুরু করলো। দেখতে দেখতে আমারও ফ্রেন্ড লিস্ট বড় হয়ে পাঁচ হাজার হয়ে গেলো। এবার আমি যাহাই করিনা কেনো – লাইক কমেন্টের আর অভাব হয় না। মাঝে মাঝেই আমি আমার প্রোফাইল পিক বদলাই। হাজার হাজার রোমান্টিক কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়। কতো রোমিওরা ইনবক্স ভরে ফেলতে লাগলো।

আমি দেখি, হাসি, আর ভাবি যে এই ফেসবুক একাউন্টটা কাজে লাগানোই যায়। একদিন আমি পোস্ট দিলাম, – আমি আমার হাত ঘড়িটা বেঁচে দেবো। দুই ঘন্টার মধ্যেই একটা সেকেন্ড হ্যান্ড লেডিস ঘড়ি বেচা হয়ে গেলো দুই হাজার টাকায় অথচ যার নতুন বাজার দর তিনশ টাকা।

About The Author

Alam M

I’m Alam — a writer of words and a seeker of stories hidden in everyday moments. Through my writing, I aim to shape fleeting thoughts into sentences that linger in the mind long after they’ve been read. Words are my canvas, and stories are the colors I paint with.